হিমাংশু দত্ত, জন্ম অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লায়, সংগীত শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। পরবর্তী কালে ত্রিপুরা রাজদরবারের বৃত্তিপ্রাপ্ত সংগীতজ্ঞ শ্যামাচরণ দত্ত ও ওস্তাদ মহম্মদ খুরসেদ হুসেন-এর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন।
হিমাংশু দত্ত
প্রথাগত শিক্ষা কুমিল্লার জেলা স্কুলে, পরবর্তী কালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে, মাঝখানে অসুস্থতার জন্য দুবছর পড়াশোনা বন্ধ হলেও ১৯২৯ সালে আই.এসসি. পাস করে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। ইতিমধ্যেই তিনি পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসেছেন। দুজনেরই তিনি অত্যন্ত স্নেহভাজন।
১৯২৯ সালে বেতারে তাঁর সুরারোপিত ‘দখিন হাওয়া বেয়ে তোমায়’ গানটি সুধামাধব সেনগুপ্তর কণ্ঠে পরিবেশিত হয়। ১৯৩১ সালে গ্রামাফোন কোম্পানি (HMV) তাঁর সুরারোপিত “সাগর পারের বন্ধু আমার’ গানটি সতী দেবীর কণ্ঠে রেকর্ড প্রকাশ করে। এইচ.এম.ভি., মেগাফোন, হিন্দুস্থান রেকর্ড, পাইয়োনীয়ার, সোনেলা রেকর্ড ইত্যাদি কোম্পানি থেকে তাঁ সুরারোপিত রেকর্ড বেরিয়েছিল।
চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশ রাধা ফিল্মস প্রযোজিত দক্ষযজ্ঞ (১৯৩৪) ছবিতে। এই ছবিতে তিনি হরিপদ রায়ের সাথে যৌথ ভাবে সংগীত পরিচালনা করেন। ধীরেন গাঙ্গুলী পরিচালিত বিদ্রোহী (১৯৩৫) ছবিতে তিনি যৌথ ভাবে সংগীত পরিচালনা করেন কৃষ্ণচন্দ্র দের সাথে।
ভারতলক্ষ্মী পিকচার্স প্রযোজিত মধু বসু পরিচালিত অভিনয় (১৯৩৮) ছবিতে তিনি প্রথম স্বাধীন সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এই ছবির গীতিকার ছিলেন হেমন্ত গুপ্ত এবং গানগুলি গেয়েছিলেন সুধা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইলা ঘোষ এবং সুনীল ঘোষ।
১৯৩৪-৪৪ মাত্র এগারো বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি স্বাধীন ভাবে তেরোটি এবং যৌথভাবে পাঁচটি ছবির সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৪২ সালে দুটি হিন্দী ছবিরও সংগীত পরিচালনার কাজে বোম্বাই চলে যান।
তাঁর সুরে যে সব বিখ্যাত শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন তাঁরা হলেন শচীন দেববর্মণ, কমলা ঝরিয়া, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, মাধুরী সেনগুপ্ত, শৈল দেবী, বেচু দত্ত, ইন্দ্রাণী রায় প্রমুখ। ১৯৪৪ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। বঞ্চিতা (১৯৪৫) এবং গৃহলক্ষ্মী (১৯৪৫) ছবি দুটি তাঁর মৃত্যুর পর মুক্তি পায়। তাঁকে ‘সুরসাগর’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
চলচ্চিত্রপঞ্জি —
- ১৯৩৪ দক্ষযজ্ঞ:
- ১৯৩৫ বিদ্রোহী,
- ১৯৩৭ প্রভাস মিলন:
- ১৯৩৮ অভিনয়:
- ১৯৩৯ পরশমণি, রুক্মিণী।
- ১৯৪০ স্বামী স্ত্রী, পথ ভুলে,
- ১৯৪১ অবতার, শ্রীরাধা, নন্দিনী:
- ১৯৪২ জীবন সঙ্গিনী:
- ১৯৪৩ অভিসার, জননী, পাপের পথে:
- ১৯৪৪ সমাজ, সন্ধ্যা;
- ১৯৪৫ বন্দিতা, গৃহলক্ষ্মী।
আরও দেখুনঃ