বাংলাদেশের অসম্ভব জনপ্রিয় একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রোজিনা। চলচ্চিত্রে আসার আগে তিনি ঢাকায় মঞ্চ নাটক করতেন। তখন তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করে চলচ্চিত্র জগতে আসেন। ১৯৮০ সালে রোজিনা ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর হিসেবে ‘জীবন ধারা’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বাচসাস পুরষ্কারও লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
অভিনেত্রী রোজিনা রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দে জন্মগ্রহণ করেন। রোজিনার পারিবারিক নাম ছিল রওশন আরা রেণু। কিন্তু সিনেমা করতে এসে সেই নাম পাল্টে হয়ে গেলেন রোজিনা।
চলচ্চিত্রে আগমন
অভিনেত্রী রোজিনা মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের কাজ করার পর বড়পর্দায় ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান। পরে তিনি এফ. কবীর পরিচালিত ‘রাজমহল’ সিনেমার মাধ্যমে একক নায়িকা হিসেবে কাজের সুযোগ পান। এই ছবিটি সফল হয় এবং তিনি হাতে বেশ কিছু ছবি পান। রোজিনার বেশির ভাগ ছবিই পোষাকী। সুঅভিনয় ও গ্ল্যামার দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৭৭ সালে এফ কবীর চৌধুরীর ‘রাজমহল’ ছবিতে চিত্রনায়ক ওয়াসিমের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পাই। তারপর একে একে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করি। আমজাদ ভাই এর ‘কসাই’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। তারপর শুধু বাংলাদেশ নয়- নেপাল, পাকিস্তান, ভারত এসব দেশের ছবিতেও অভিনয় করি।’‘কসাই’ চলচ্চিত্রের পর মতিন রহমান পরিচালিত ‘জীবনধারা’ ছবির জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর কবীর আনোয়ার পরিচালিত ‘দিনকাল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যও পুরস্কৃত হন।
খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানী যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হাম সে হায় জামানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। ওই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক নাদিম।এরপর ১৯৮৪ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘অবিচার’ এ মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।
রোজিনা অভিনীত চলচ্চিত্রের গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘এই মন তোমাকে দিলাম, তুমি চোখের আড়াল হও, কাছে কি বা দূরে রও’ ‘ছেড়ো না ছেড়ো না হাত’ ‘তুমি আমার কত চেনা’ এ ধরনের অসংখ্যা কালজয়ী গানের মাধ্যমে রোজিনা নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
অভিনেত্রী রোজিনা বর্তমানে লন্ডনেই বেশিরভাগ সময় থকেন। ক্ষতিপূরণ, ধনী গরীব, আনারকলি, কসাই, দোলনা, রুপবান, অবিচার, রাস্তার রাজা, মিস ললিতা, অভিযান, মানসীসহ প্রায় ২৫৫টি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ‘রাক্ষসী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগত থেকে বিদায় নেন এক সময়ের পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রী।
পুরস্কার
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য একাধিক বার মনোনিত ও পুরস্কৃত হয়েছেন।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী – কসাই (১৯৮০)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – জীবন ধারা (১৯৮৮)
বাচসাস পুুরস্কার
- বিজয়ীঃ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী – সুরু মিঞা (১৯৮৬)
আরও দেখুনঃ