শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্র

শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্রঃ বাংলা চলচ্চিত্র বা বাংলা সিনেমা ১৮৯০ সালে ভারতের কলকাতায় বায়োস্কোপ নামে শুরু হয়েছিল। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের কলকাতায় বাঙালিদের মধ্যে প্রথম বায়োস্কোপ কোম্পানি গঠন করেন তৎকালীন ঢাকার বগজুরী গ্রামের হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির নাম রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি। তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা।

 

শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা – সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স (কলকাতা), এরাটো ফিল্মস (প্যারিস) ও ডি.ডি. প্রোডাকসন্স (প্যারিস)।
  • কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংগীত ও পরিচালনা – সত্যজিৎ রায়।
  • চিত্রগ্রহণ — বরুণ রাহা, সন্দীপ রায়।
  • শিল্প নির্দেশনা – অশোক বসু
  • সম্পাদনা— দুলাল দত্ত।
  • শব্দগ্রহণ — পিয়ের ল্যনোয়া, সুজিত সরকার, জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, অনুপ মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, হিতেন্দ্র ঘোষ।
  • কণ্ঠ সংগীত – অজয় চক্রবর্তী, শ্রমণা গুহঠাকুরতা।
অভিনয় –

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতাশঙ্কর, লিলি চক্রবর্তী, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমোদ গঙ্গোপাধ্যায়, শ্ৰীমান সোহম চক্রবর্তী, ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, রাজারাম য়াগনিক, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, শোভেন লাহিড়ী, সুনীল গুপ্তকবিরাজ, কামু মুখোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, তরুণ মিত্র, সমরেশ মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ শ্বেতা ভাদুড়ী, লতিকা মণ্ডল, পীতাম্বর, ক্ষেত্রা, বলরাম।

 

শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

কাহিনি—

ছোটনাগপুরের অভ্রখনি এলাকার একটি ছোট শহর ‘আনন্দনগর’। এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি আনন্দমোহন মজুমদার (অজিত) কঠোর পরিশ্রম এবং ব্যক্তিগত সততায় ওরিয়েন্ট মাইকা ওয়ার্কস-এর সামান্য চাকরি থেকে ঐ কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার পদে উত্তীর্ণ হন, বিশ্বাস করেন সততার কোনো বিকল্প নেই।

বর্তমানে তিনি আনন্দনগরে দ্বিতীয় পুত্র প্রশান্ত (সৌমিত্র) এবং বৃদ্ধ জরাগ্রস্ত পিতাকে (প্রমোদ) নিয়ে অবসর জীবন কাটান। প্রশান্ত বিলেতে পড়াশুনা করতে গিয়ে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে এবং তার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। অন্য পুত্ররা তাদের সংসার নিয়ে কলকাতায় থাকে। তাঁর সত্তর বছরের জন্মদিনে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন আনন্দমোহন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বড়ছেলে প্রবোধ (হরিধন), তার স্ত্রী উমা (লিলি), সেজ ছেলে প্রবীর (দীপঙ্কর), তার স্ত্রী তপতী (মমতা), ৫ বছরের পুত্র ডিংগো (সোহম) এবং ছোট ছেলে প্রতাপ (রঞ্জিত) বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে আনন্দনগরে আসে। আনন্দমোহন সততায় বিশ্বাসী হলেও প্রবোধ বা প্রবীর বাবার মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না, তারা ভালোভাবে বাঁচার জন্য কালো টাকা রোজগারকে অন্যায় মনে করে না, যদিও ছোট ছেলে প্রতাপ দাদাদের সাথে একমত নয়। প্রতাপ দাদার অন্যায়ের প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে পেশাদার অভিনেতা হিসাবে জীবনযাপনে আগ্রহী।

 

শাখাপ্রশাখা চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

আনন্দমোহন নাতির মুখ থেকে বড় ছেলে ও সেজ ছেলের কালো টাকা রোজগারের বিষয়টি জানতে পেরে মর্মাহত হলেও মেজ ছেলে প্রশান্তর (যে কিনা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে এই সবের ঊর্ধ্বে) দিকে তাকিয়ে বাকি জীবনটা নিজের বিশ্বাসে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নেন। প্রশান্ত বাবার উদ্বেগ কিছুটা বুঝতে পারে, সে বাবার হাত আঁকড়ে ধরে।

মূল্যবোধের অবক্ষয় কিভাবে মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে তা সত্যজিৎ এই ছবির মধ্য দিয়ে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন, প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় এই ছবির কাহিনিকারও সত্যজিৎ রায়।

এই ছবি কলকাতা ও প্যারিসে একই দিনে মুক্তি পায়। ছবির সমালোচনা করতে গিয়ে চিদানন্দ দাশগুপ্তর কিছু মন্তব্য সত্যজিৎকে অসন্তষ্ট করেছিল।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রকাশনা –

ছবির চিত্রনাট্য এক্ষণ পত্রিকায় ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment