বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, জন্ম ১৯৪৪ সালে পুরুলিয়া জেলার আনাড়া গ্রামে, পিতা তারকনাথ দাশগুপ্ত পেশায় ছিলেন ডাক্তার, রেলে চাকরি করতেন। ছেলেবেলায় বাবার বদলির চাকরির জন্য বহু স্থানে ঘুরতে হয়, ১২ বছর বয়সে হাওড়ার দীনবন্ধু স্কুলে ভর্তি হন। স্কটিশচার্চ কলেজ ও পরবর্তী কালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্মান লাভ করেন।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
বর্ধমানের শ্যামসুন্দর কলেজ এবং কলকাতায় সিটি কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন, ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনার কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৯৬১ সাল থেকেই তাঁর লেখা কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা শুরু হয়।
‘কবিতা’, ‘পূর্বাশা’, ‘কৃত্তিবাস’ ‘এক্ষণ’ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়েছে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ কফিন কিংবা সুটকেস (১৯৭২), হিমযুগ (১৯৭২), ছাতাকাহিনী (১৯৮২), রোবটের গান (১৯৮৫), এবং শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯০)।
প্রথম উপন্যাস ‘নিখিলের বেঁচে থাকা’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। পরবর্তী উপন্যাসগুলি হল ‘আমেরিকা আমেরিকা (১৯৯৫), ইয়াসিনের আশ্চর্য কাহিনী’ (১৯৯৬), ‘রহস্যময়’ (১৯৯৬) ইত্যাদি।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগ। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্যও ছিলেন। এই সময় দেশ বিদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্রকারদের কাজের সাথে পরিচয় হয়। ছাত্রাবস্থায় নকশালপন্থী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন, তাঁর প্রথম কাহিনিচিত্র দূরত্ব (১৯৭৮) এবং পরে গৃহযুদ্ধ (১৯৮২), অন্ধিগলি (১৯৮৪) ইত্যাদি ছবিগুলিতে তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। প্রথম কাহিনিচিত্র দূরত্ব তৈরি করার আগে এবং পরে অনেকগুলি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন ৷
উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্রগুলি হল, দি কনটিনেন্ট অফ লাভ (১৯৬৮), দি কিং অফ ড্রামস (১৯৭৪), শরৎচন্দ্র (১৯৭৬), বিজ্ঞান ও তার আবিষ্কার (১৯৮০), দি রিদম অফ স্টীল (১৯৮২), ইন্ডিয়া অন দি মুভ (১৯৮৫), দি স্টোরি অফ গ্লাস (১৯৮৬) ইত্যাদি।
আদিবাসী সংস্কৃতির উপর করা Colours and Lines of Freedom A Folk of Tribal Heritage’ (১৯৯৭) এবং গণেশ পাইনের উপর করা Silence of an Eloquent Painter Ganesh Pyne (১৯৯৮) তথ্যচিত্র দুটিও উল্লেখের দাবি রাখে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ছবিতে আমরা মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের পাশাপাশি সমকালীন বাস্তবতা, পরিবেশের ভারসাম্য, সামাজিক সমস্যাগুলির উপর আলোকপাতেরও প্রয়াস দেখতে পাই।
সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল পরবর্তী প্রজন্মের চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বুদ্ধদের দাশগুপ্ত ১৯৭৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৬টি কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন, কাহিনিচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি ১২টি তথ্যচিত্র এবং দূরদর্শন চিত্রও নির্মাণ করেন। দেশে বিদেশে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের সাথে সাথে বহু সম্মান অর্জন করেছেন।
তাঁর চলচ্চিত্র সংক্রান্ত প্রবন্ধ সংকলন ‘স্বপ্ন, সময় ও সিনেমা’ গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালে বাণীশিল্প থেকে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে তাঁর চিত্রনাট্যের সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৮ সালে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত স্পেন ইন্টারন্যাশনাল চলচ্চিত্র উৎসব তাঁকে লাইফটাইম এচিভমেন্ট সম্মানে ভূষিত করে, এবং ২০০৭ সালে এথেন্স চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি গোল্ডেন এথেনা সম্মানে ভূষিত হন।
চলচ্চিত্রপঞ্জি — কাহিনিচিত্র –
- সময়ের কাছে (স্বল্প দৈর্ঘ্যা, ১৯৬৮),
- দূরত্ব (১৯৭৮),
- নিম: অন্নপূর্ণা (১৯৭৯),
- গৃহযুদ্ধ (১৯৮২),
- অন্ধিগলি (হিন্দী, ১৯৮৪),
- ফেরা (১৯৮৮),
- বাঘ বাহাদুর (হিন্দী, ১৯৮৯),
- চরাচর (১৯৯৩),
- লাল দরজা (১৯৯৭),
- উত্তরা (২০০০),
- মন্দ মেয়ের উপাখ্যান (২০০২),
- স্বপ্নের দিন (২০০৪),
- আমি, ইয়াসিন আর আমার মধুবালা (২০০৭),
- কালপুরুষ (২০০৮), (২০০৯),
তথ্যচিত্র এবং দূরদর্শন চিত্র—
- দি কনটিনেন্ট অফ লাভ (১৯৬৮),
- ঢোলের রাজা ক্ষীরোদ নট (১৯৭৪),
- ফিশারম্যান অফ সুন্দরবন (১৯৭৪),
- শরৎচন্দ্র (১৯৭৬),
- বিজ্ঞান ও তার আবিষ্কার (১৯৮০),
- দি রিদম অফ স্টীল (১৯৮১),
- ইন্ডিয়ান সায়েন্স মার্চেস এ্যাহেড (১৯৮৪),
- স্টোরি অফ গ্লাস (১৯৮৫),
- ইন্ডিয়া অন দি মুভ (১৯৮৫),
- সিরামিক্স (১৯৮৬),
- কনটেমপোরারী ইন্ডিয়ান স্কাল্পচার (১৯৮৭),
- হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান জুট (১৯৯০) ইত্যাদি।
প্রকাশনা—
সিনে সোসাইটি মোসাবনি প্রকাশিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বিশেষ সংখ্যা, ১৯৮৭ ইংরাজি ভাষায় প্রকাশিত।
এ পোয়েট উইথ এ ক্যামেরা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এ মনোগ্রাফ। ইংরাজি গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন অজয় কুমার দে। কলকাতা, নন্দন, ১৯৯৪। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সিনেমা অফ ইমপ্রিন্টেড টাইমস। ইংরাজি ভাষায় গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন প্রদীপ বিশ্বাস। কলকাতা, অরোরা ফিল্ম কার্পোরেশন, ১৯৯৯। দি ফিল্মস অফ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
জন ডাবলু হুড। ইংরাজি ভাষায় লিখিত গ্রন্থটি ২০০৫ সালে ওরিয়েন্ট লংম্যান নিউ দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয়।
আরও দেখুনঃ