বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম ।

বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

 

বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

 

বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

বয়সে যারা আমাদের থেকে বড় তারা আমাদের মঙ্গলের আশায় বেশকিছু কথা বলেন। যেমন তারা বলেন, একটা মানুষ সব জেনে জ্ঞানী হতে পারে না। কিন্তু কোথায় কী আছে যে জানে সে অনেক জ্ঞানী। জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন শেষে জীবনের পড়ন্তবেলায় মহাজ্ঞানী বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন যদি সামান্য নুড়ি পাথর কুড়িয়েছেন বলে প্রজ্ঞা এবং বিনয়ের কীর্তি স্থাপন করতে পারেন তবে সেটা আনন্দের এবং অনুকরণের মতো বিষয়।

কিন্তু আমরা যারা অনেক এগিয়ে থাকা মানুষের থেকে অনেক অনেক পিছনে, আমরা যারা সব জেনে জ্ঞানীও না আবার কোথায় কী আছে তাও ঠিকমতো করে জানি না সেই আমরা কি অজ্ঞতার কারণে লজ্জিত হবো নাকি জ্ঞানের আলোক রশ্মির আগমনের অপেক্ষায় অপেক্ষা করবো। এই তো কিছুদিন আগে মাত্র ওয়াটার গেট এবং ওয়াটার লু নামের ইংরেজি শব্দ দুটির মানে যা জানতাম তা কাউকে বলতে পারি না কারণ পাছে সে আমার থেকেও বেশি লজ্জিত হয়।

ওয়াটার গেট নামে ভাবতাম নদীর মধ্যে বাধ নির্মাণ করলে সেই বাধটাই হয় ওয়াটারের গেট। গেট খুললে তীব্র স্রোতে জল বেরিয়ে যাবে আর গেট বন্ধ থাকলে জলের স্রোত থমকে দাঁড়াবে যেমনটা ঘটে ফারাক্কা বাঁধের ক্ষেত্রে।

ওয়াটার গেট মানে যে নদীর বাঁধ না বরং এফ কেনেডি, বিল ক্লিন্টন, বারাক ওবামার পার্টি, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং সেই ডেমোক্রেটিক পার্টির সদর দফতর আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনের যে সুরমা অট্টালিকায়, সেই অট্টালিকার নাম ওয়াটার গেট।

বিষয়টা জানা গেল ২০০৯ সালে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে অস্কারে মনোনীত চলচ্চিত্র ফ্রস্ট/নিক্সন দেখার সুবাদে। আর ওয়াটারলু মানে ভাবতাম বার্ডফু যেমন বাতাস বাহিত সংক্রামিত রোগ তেমনি ওয়াটারলু মানে জলবাহিত সংক্রামিত কোনো এক রোগ।

কিন্তু অতিসম্প্রতি জীবনীশতক বইটি পড়ার সুবাদে জানা গেল ১৯১৫ সালে ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ব্রিটিশ ডিউক অব ওয়েলিংটনের নিকট পরাজিত হন যে স্থানে, সেই স্থানটির নাম ওয়াটার লু। ওয়াটার লু একটি গ্রাম কিন্তু নেপোলিয়নের নামের সাথে যুক্ত থেকে ওয়াটার লু আজ একটি ঐতিহাসিক স্থান। আর এই ঐতিহাসিক ওয়াটার লুকে বুকে ধারণ করে ইউরোপের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশ বেলজিয়াম। ওয়ারটার দু বেলজিয়ামেরই একটি গ্রাম।

একটি গ্রাম না একশোটি গ্রাম সেই পরিচয়ে বেলজিয়াম পরিচিত না হলেও বেলজিয়াম পরিচিত দুটি কারণে। একটি সুনামে অন্যটি বদনামে। সুনামটা হলো পাইলটদের বসার ঘর ককপিট যেমন বিমানের গুরুত্বপূর্ণ স্থান তেমনি ইউরোপের ককপিট হিসেবে পরিচিত বেলজিয়াম ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আর বদনাম হলো ইউরোপের রণক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত স্থানটিও বেলজিয়াম।

বেলজিয়ামের মাটিতে যেমন মিশে আছে বারুদের গন্ধ তেমনি বেলজিয়ামের বাতাসে ভেসে বেড়ায় ভুবনবিখ্যাত গোলাপের ঘ্রাণ। গন্ধে- আণে বিভোর মাতোয়ারা বেলজিয়াম যে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে, লক্ষ্যে পৌছানোর সিদ্ধান্তে বেলজিয়াম যে অনড়, সফলতা লাভ করার জন্য মন- প্রাণ-দরদ ঢেলে সাধনা করে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য যে কোনো বিকল্প নেই।

অক্টোপাসের এই জনঅরণ্যে বাঁচতে হবে যে শেষ পর্যন্ত কৌশলে সেই সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ২০০০ সালে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে মনোনীত বেলজিয়াম পরিচালক দমেনিক দেরুদার সাহসী এবং বাস্তবঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র ‘এভরিবডি ফেমাস’।

এভরিবডি তথা সবাই, ফেমাস তথা বিখ্যাত। সবাই যে চেতনে-অবচেতনে করণীয় কাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে জগৎসভায় একটা দাগ রেখে যেতে চায়, কীর্তি স্থাপন করতে চায়, সহস্র প্রতিকূলতা উত্তরে যে গন্তব্য পৌঁছানো যায় এ কথা বিশ্বাস করে যে বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র অনুরাগীরা সেই বেলজিয়ামের চলচ্চিত্রের বেড়ে ওঠাটাও সীমিত কিন্তু সাবলীল, বহুধারা কিন্তু সুনির্দিষ্ট, বিচিত্রতায় পূর্ণ কিন্তু মৌলিক।

মৌলিক হোক কিংবা যৌগিক হোক কোনো কাজের শেষ কথা যেমন গন্তব্যে পৌঁছানো ঠিক তেমনি চলচ্চিত্র নির্মাণের শেষ ধাপ অনুরাগী দর্শকের সামনে চলচ্চিত্র প্রদর্শন। সেই হিসেবে বেলজিয়ামের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের কিংস গ্যালারিতে। সময়টা ছিল ১৮৯৩ সালের ১ মার্চ। সমুদ্রের মাঝ দিয়ে জাহাজ গেলে যেমন ঢেউ কূলে এসে আছড়ে পড়ে ঠিক তেমনি এই প্রদর্শনী শেষের পর থেকে বেলজিয়ামজুড়ে চলচ্চিত্র নিয়ে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড এগিয়ে যেতে থাকে ।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবির যেমন একটা চলচ্চিত্রের স্টুডিও গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন ঠিক তেমনি ১৯১০ সালে আলফ্রেড ম্যাকেইন নিজ চেষ্টায় বেলজিয়ামে প্রথম চলচ্চিত্র স্টুডিও গড়ে তোলেন। বাগান থাকলে যেমন বাগানে নানা জাতের গাছগাছালি থাকে তেমনি স্টুডিওর কল্যাণে আলফ্রেড ম্যাকেইন বেশকিছু সংখ্যক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

আলফ্রেড ম্যাকেইন আজ আর নেই কিন্তু তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো পরম মমতায় ব্রাসেলসের রয়েল ফিল্ম আর্কাইভে এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র অনুরাগী কিংবা বহির্বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা যদি সেসব চলচ্চিত্র দেখতে চায় তবে রয়েল ফিল্ম আর্কাইভের সদর দরজা সব সময়ের জন্য খোলা।

খোলা দরজা পেলেই তো আর সব সময় ভিতরে প্রবেশ করা যায় না। চলচ্চিত্র নির্মাণের সব গুণ থাকলেই তো আর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় না।। একটা ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজন অনেক অনেক টাকা।

স্বাভাবিকভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণে যারা অর্থ বিনিয়োগ করেন তাদেরকে সবাই প্রযোজক হিসেবে জানে। লেখকের লেখা পাণ্ডুলিপি যেমন প্রকাশক পৃষ্ঠপোষকতা করে বই আকারে প্রকাশ করেন ঠিক তেমনি পরিচালকের চিন্তা ভাবনা এবং নির্মাণদক্ষতার সামগ্রিক বাস্তবায়ন ঘটান প্রযোজক।

বেলজিয়ামে অর্থলগ্নি এবং চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করার মননশীল ভাবনা এবং সক্ষমতা নিয়ে যিনি প্রথম এগিয়ে আসেন তিনি হলেন হিপোলেট ডি ক্যাম্পিনার। নির্মাতাদের কথা মাথায় রেখে তিনি একটি স্টুডিও গড়ে তোলেন।

মাঠে সবুজ ঘাস দেখলে যেমন গরুদের আনন্দ হয়, সারা মাঠ চরে চরে ঘাস খায় তেমনি একজন ভালো প্রযোজকের তত্ত্বাবধান এবং স্টুডিও সুবিধা পেয়ে নির্মাতারা এমন ঢেলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। কিন্তু সুখ কিংবা দুঃখ যেমন মানুষের কপালে ধারাবাহিকভাবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না ঠিক তেমনিভাবে প্রযোজক হিপোলেট ডি ক্যাম্পিনারের নির্মিত স্টুডিওতে বিপর্যয় নেমে আসে।

যে কারণে উঠতি অপরিচিত দুটি ছেলেমেয়ের পাশাপাশি অবস্থানে অভিভাবক মাত্রই আগুনের পাশে ঘিকে বেশি দাহা ভেবে অজানা আতঙ্কে ভোগেন ঠিক তেমনি বাতাসের স্পর্শে সেলুলয়েড ফিতার রাসায়নিক উপাদানের সংঘাতে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার একটা কাহিনী বিবরণ দেখা যায় ইতালির চলচ্চিত্র ‘সিনেমা প্যারাডিসো’তে। ফলে প্রযোজক হিপোলেট ডি ক্যাম্পিনারের স্টুডিও আগুনে পুড়ে যায় ১৯২৩ সালে। পুড়ে যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক হলেও ততদিনে নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা বেশকিছু হয়ে যাওয়াটা আনন্দের। সাথেই কি গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিশ্বাসের জায়গা থেকে বলে শুভস্য শীঘ্রম। যা কিছু শুত, যা কিছু মঙ্গলের তা করে ফেলতে হবে এখুনি।

এখুনি হোক আর তখুনি হোক ভালো মানুষ এসে পড়লে একটা না একটা কিছু ভালো ঘটবেই। ১৯৩০-এর দশকে বেলজিয়ামে দুজন বলিষ্ঠ নির্মাতার আবির্ভাব ঘটে। একজন চার্লস ডিকুইকিলার, অপরজন হেনরি স্টোরেক।

দুজনে মিলে বেলজিয়ামের মাটিতে একটা চারা গাছ পুঁতলেন যেটি শুরু থেকে আজো বেলজিয়ামের মাটিতে মহীরুহ হয়ে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। চারা গাছটির নাম ‘বেলজিয়াম ডকুমেন্টরি স্কুল’। স্কুল থাকলেই শিক্ষার্থী আসবে আর শিক্ষার্থী পাস করে বের হলে কোথাও না কোথাও জ্ঞানের অনির্বাণ আলো জ্বালবে।

আলো জ্বালালেন বেলজিয়াম পরিচালক জন ভেন্ডারহেডেন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যেমন চমৎকার কিশোর উপন্যাস (দীপু নাম্বার টু) লেখায় দক্ষ তেমনি বেলজিয়াম কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট ক্লেয়াস।

আর্নেস্ট ব্লেয়াসের বহুল পঠিত এবং বহুল প্রচারিত কিশোর উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র ‘ডি উইট’ নির্মাণ করে চলচ্চিত্র নির্মাতা জন ভেন্ডারহেডেন তামাম বেলজিয়াম জুড়ে হৈচৈ ফেলে দিলেন। ডি উইট চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বেলজিয়াম চলচ্চিত্র একটা সুসংহত জায়গায় পৌঁছে গেল।

ডি উইট চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটা কিশোর যার একমাত্র কাজ বড়দের যে কোনো কথার উল্টো কাজটা করা। কিশোরটা এক কৃষকের দুরন্ত ছেলে। গ্রাম প্রতিবেশীদের কাঁচা ঘুম নষ্ট না করতে পারলে তার নিজেরই ঘুম আসে না, পাকা ধান ক্ষেতে গরু ছাগল ছেড়ে দিয়ে পাকা ধানের সাড়ে সর্বনাশ না করতে পারলে তার তৃপ্তি হয় না—এ রকম নানা দস্যিপনা করে তার দিন কাটে।

একটা সময় সবাই মিলে দস্যি কিশোরটাকে মৃদুমন্দ শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং সেই অবস্থায় কিশোরটির মনোজগতের পরিবর্তন নিয়েই চলচ্চিত্র ডি উইট।ডি উইট হোক আর দ্য হোয়াইট হোক সাদা কাপড় থাকলেই তাতে ময়লা ধরবেই। মানুষের সাদা মনে কাদা লাগবেই। এই কাদা যুদ্ধের ভয়াবহতা।

পরপর দুদুটি বিশ্বযুদ্ধকে চোখের সামনে ঘটতে দেখলো বেলজিয়ামবাসী। মনে আনন্দ না থাকলে যেমন কোনো কাজ করেই শান্তি নেই তেমনি সামগ্রিক প্রতিকূলতাকে মেনে নিয়েই যুদ্ধ-পরবর্তী বেলজিয়াম নির্মাতারা ঝুঁকে পড়লো অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে। পৃথিবীর একটা বড় অংশের শিশু থেকে বৃদ্ধরা যেমন টম অ্যান্ড জেরি অ্যানিমেটেড

চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিত তেমনি পরিচিত বেলজিয়াম অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র “হারপে’র সাথে। চলচ্চিত্র নির্মাতা রাউল সার্ভেইসের নেতৃত্বে একদল অ্যানিমেটর ৬০-এর দশকে পুরোটা সময়জুড়ে এনিমেটেড চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বেলজিয়ামকে এগিয়ে নিতে থাকে।

১৯৭৯ সালে নির্মাতা রাউল সার্ভেইস নির্মিত ‘হারপে’ সেরা শর্ট ফিচার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন পাম অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে আনে। হারপে চলচ্চিত্রে দেখা যায় এক সন্ধ্যায় এক বাড়ির গৃহকর্তা বেরিয়েছে সন্ধ্যাভ্রমণে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গৃহকর্তাটি দেখে এক ঝরনা তলায় একটি কিশোরীকন্যাকে চুবিয়ে মারছে এক নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক।

গৃহকর্তা নিষ্ঠুর লোকটির হাত থেকে কিশোরী কন্যাকে রক্ষা করে, সে যাত্রা মেয়েটিকে বাঁচিয়ে তোলে। মেয়েটিকে সঙ্গে করে নিঃসঙ্গ গৃহকর্তাটি বাড়ি ফেরে। বাড়ি ফিরে গৃহকর্তাটি মেয়েটিকে দেখে তাজ্জব। কারণ মেয়েটি পুরোপুরি মেয়ে না।

মেয়েটির দেহের উপরিভাগ নারীদেহের গঠন হলেও নিচের অংশ পাখির মতো। মূলত মেয়েটি ঈগল জাতীয় একটি শিকারি পাখি। সব বুঝেও গৃহকর্তাটি মেয়েটির সাথে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মেয়েটি অবুঝ।

সে যেমন ঘরের সব জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে তেমনি গৃহকর্তাটিকেও ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। অস্থির এবং বৈরী পরিবেশে বিরক্ত হয়ে গৃহকর্তাটি এক সময় ঘর থেকে পালিয়ে কোনো রকমে বাঁচে। যে ঘর থেকে পালাতে পারলে জীবনের মতো বেঁচে যায়।

গৃহকর্তাটি, সেই ঘর থেকে পালিয়ে ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুনঃবিভ্রান্ত গৃহকর্তাটি। ঘর যেন দুহাত তুলে ডাকছে, আয় ঘরে আয়, ফিরে আয়। হারপে তথা শিকারি মেয়ে আকৃতির পাখির মোহে আচ্ছন্ন গৃহকর্তার মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের চলচ্চিত্র হারপে।

হারপে পুরোপুরি মানুষ না কিন্তু মানুষের মানব তীর্থযাত্রা এগিয়ে চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাতে হাত ধরে। ১৯৬৪ সালের পর থেকেই বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র অঙ্গনে নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে আন্দ্রে ডেলভাউস, রোল্যান্ড ভারহেভার্ড, হেনরি কুমেল অন্যতম।

১৯৮০-এর দশকে দেখা গেল একটা পরিবর্তন। বাংলা সাহিত্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যের গভীরতা এবং বিস্তৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও যেমন কবি জীবনানন্দ দাশ একটা নিজস্ব ঘরানার কাব্যশৈলী নির্মাণ করতে সক্ষম হলেন অনেকটা সে রকম ভাবে ১৯৮০ এর দশকে দেখা গেল নির্মাতারা ৬০ ও ৭০ দশকের ধারা ভেঙে নতুন বাস্তবতার (নিওরিয়েলিজম) আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা শুরু করলেন।

রিয়েলিজম এবং নিউ রিয়েলিজম শব্দ দুটি চলচ্চিত্রের বেড়ে ওঠার পথপরিক্রমার সাথে বিশেষভাবে জড়িত। আমরা যারা মতবাদের প্রতিষ্ঠার সাথে কোনোভাবে যুক্ত না কিন্তু মত ভালো লাগলে মতের অনুসারী, আমরা যারা আম বাগানে যেয়ে আমের পাতা শুনিনা আম খাই সেই আমাদের কাছে রিয়েলিজম এবং নিওরিয়েলিজম খুবই সহজ এবং স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

রিয়েলিজম যেখানে একটা লেজ মাথা যুক্ত আস্ত ইলিশ মাছকে মাছ হিসেবেই গণ্য করে নিওরিয়েলিজম সেখানে ইলিশ মাছ এবং মাছ থেকে উৎসরিত ঝিলিকসহ মাছকে গণ্য করে। নিওরিয়েলিজমের চলচ্চিত্র নির্মাতারা বস্তুর সাথে বস্তুর ভাবনাটাকেও গভীরভাবে তুলে ধরেন।

একজন রিয়েলিজম চলচ্চিত্র নির্মাতার চলচ্চিত্রে হয়তো একটা মানুষের চাকরি পাওয়ার স্ট্রাগলটাই মুখ্য কিন্তু একজন নিওরিয়েলিজম চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়তো সেখানে দেখাবেন চাকরি পাওয়াটা লোকটির জন্য সামাজিক ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে সত্য কিন্তু চেতনায় চলছে অহরহ অতৃপ্তির রক্তক্ষরণ।

কারণ মানুষটি আজীবন চেয়েছিল মঞ্চের একজন নিয়মিত অভিনেতা হয়ে অভিনয় সত্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে কিন্তু আজকের বাস্ত সময়ে দাঁড়িয়ে সকাল ১০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস করতে করতে সেই অভিনয়সত্তা বিলুপ্তপ্রায়।

মতবাদের বিভিন্নতার কারণে চলচ্চিত্র মাধ্যমের ভাব ও আদর্শ কখনোই পথভ্রষ্ট হয়নি, আজো না। কে না জানে কেউ হয়তো ইলিশ মাছ ভাজা খেতে পছন্দ করে, কেউ সরষে ইলিশ খেতে পছন্দ করে, আবার কেউ ইলিশের সাথে বেগুন আলু মিশিয়ে ঝাল ঝাল ঝোল পছন্দ করে।

তিনটি আইটেম রাঁধছে তিনজন, খাচ্ছেও তিনজন কিন্তু সবটাই হচ্ছে ইলিশ মাছকে কেন্দ্র করে। তেমনি চলচ্চিত্র নির্মাতারা হয়তো বিভিন্ন মতে ও পথে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রটাই করছেন। অনুরাগী দর্শকদের বিনোদনের মধ্য দিয়ে শিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে নন।

 

বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম
বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

 

পিছিয়ে না থেকে ব্যক্তির জীবনযন্ত্রণাকে ভিত্তি করে নিওরিয়েলিজম ফর্মে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ১৯৮০-এর দশকে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন পরিচালক মার্ক ডিভেন এবং পরিচালক রবি ডি হিট। মার্ক ডিডেন নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘ব্রাসেলস বাই নাইট’।

চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনী একটি মানুষের ভ্রমণ নিয়ে। মানুষটি কিছু দিনের জন্য বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসলসে ভ্রমণ করতে এসে নানা গোত্রের নানা মানুষের সাথে মিশে একাত্ম হয়ে পড়ে। এই পরিভ্রমণের একটি পর্যায়ে মানুষটির মনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা হতাশার জমাট বরফ গলার প্রেক্ষাপট নিয়েই চলচ্চিত্র ‘ব্রাসেলস বাই নাইট’। অপর পরিচালক রবি ডি হিরট নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘ব্লুবেরি হিল’। ছাত্র এবং শিক্ষক-এর মাঝে

মধুর সম্পর্ক ভুবনবিদিত। কিন্তু এ চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায় একদল স্কুল ছাত্র উৎসব আনন্দ আর কোলাহলে গা ভাসিয়ে পড়াশোনায় অবহেলার দরুন ফাইনাল পরীক্ষায় বসার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ছাত্রদের সেই দুঃসময়ে সহযোগিতার প্রশ্নে সহযোগিতা না করে বরং অসহযোগিতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিভাবে করলেন সেই সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে চলচ্চিত্র ব্লুবেরি হিল।

সিক্ত হিলের উপরে উঠলেও বেলজিয়াম নির্মাতারা অ্যানিমেটেড ছবির ধারা থেকে সরলো না। অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের প্রতি বেলজিয়াম নির্মাতাদের ভালোবাসা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদর পেল। পরিচালক নিকল ভ্যান গোথেন নির্মিত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘এ গ্রিক ট্রাজেডি ১৯৮৭ সালে অস্কারে মনোনীত হয় এবং অ্যানিমেশন ক্যাটাগরিতে বেস্ট শর্ট ফিলা অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

লাভ-লোকসানের হিসাবের বাইরে যেয়ে যে দুটি চলচ্চিত্র ১৯৯০-এর দশকে বেলজিয়ামকে স্বতন্ত্র এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পাইয়ে দেয় তার একটি হলো ‘ম্যান বাইটস ডগ’ এবং অপরটি হলো ‘রোসেটা’।

পরিচালক রেমি বেলবাউক্স নির্মিত ম্যান বাইটস ডগ চলচ্চিত্রটি মাত্র ৯৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের হওয়া সত্ত্বেও এ চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বেস্ট ফিচার ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, টরেন্টো ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসহ নানা অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

মূলত কাহিনীর বৈচিত্র্য এবং নির্মাণের গতি দর্শক-বিচারকসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ম্যান বাইটস ডগ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র বেনথ মানুষটির দ্বৈতসত্তা। এক সত্তায় সে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির একনিষ্ঠ অনুরাগী। মায়ের সামনে আদর পাওয়া সন্তান, পিয়ানোর কী বোর্ডে হাত দিলেই সুরের মূর্ছনা।

অর্থাৎ যা কিছু ভালো তার একনিষ্ঠ সঙ্গী বেনথ। বেনথের অপর সত্তাটি বড়ই অদ্ভূত। সেটি হলো সে সিরিয়াল কিলার। কাউকে বেশি হৈচৈ করে মেরে ফেলাটা তার অপছন্দের। মারার তালিকায় তার সব থেকে বেশি পছন্দ নারী, শিশু, ইমিগ্রান্ট এবং পোস্টম্যান।

যুবক অপেক্ষা বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধাদের মেরে ফেলার প্রতি তার আগ্রহ বেশি কেন জানতে চাইলে বেনথের বক্তব্য, যুবকদের গায়ে যত শক্তি পকেট তত খালি। মারতে বেশি পরিশ্রম কিন্তু পাওনা কম। অপরদিকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধরা জরাব্যাধির কারণে মৃতপ্রায়। মারতে সময় লাগে কম এবং মারার পর অধিক সম্পদ প্রাপ্তি। কারণ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তাদের সমস্ত জীবনের অর্জিত সম্পদ প্রায়ই নিজেদের কাছে সঞ্চিত রাখে। বেনথের এসব

বলা কথা এবং বিনয়ের আস্তনাটকীয় জীবনের মুহূর্তগুলোর অংশ নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে আসা ক্যামেরা ম্যান এবং তার দুই সঙ্গী এক সময় বেনথের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেনথেরই অংশ হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য সংক্রমিত হয় না কিন্তু রোগ সংক্রমিত হয় তেমনি করে তথ্যচিত্র নির্মাতা দ্বারা বেনথ প্রভাবিত হয় না বরং বেনথ দ্বারা তথ্যচিত্র নির্মাতা প্রভাবিত হয়।

আর সে কারণেই বেনথ তথ্যচিত্র নির্মাতার সহকর্মী দুজনকে মেরে ফেললেও তথ্যচিত্র নির্মাতাকে সাক্ষ্যের সময় বলতে হয় সহকর্মীদের মৃত্যুর কারণ শ্যুটিং চলাকালীন দুর্ঘটনা। বেনথ এবং তথ্যচিত্র নির্মাতার মত-দ্বিমত নিয়েই চলচ্চিত্র ম্যান বাইটস ডগ।

অপরদিকে ‘রোসেটা’ চলচ্চিত্রটি একটি আঠারো বছর বয়সী মেয়ের জীবন নিয়ে। বাংলাদেশে বেদে সম্প্রদায়রা যেমন নৌকায় বাস করে ঠিক তেমনি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বেলজিয়ামেও গাড়িতে এক রকম ঘর করে মানুষ বাস করে।

এই গাড়িগুলোর নাম ক্যারাভ্যান। শাহরুখ খান অভিনীত ‘স্বদেশ’ চলচ্চিত্রে শাহরুখ খান যখন নাসা থেকে গ্রামে ফিরে দাদীমাকে খোঁজে তখন যে গাড়িটি পর্দায় ভেসে ওঠে সেই ক্যারাভ্যান। পার্থক্য এ পর্দার ক্যারাভ্যানটি ধনীদের জন্য আর রোসেটা মেয়েটির ক্যারাভ্যান বস্তিবাসীদের এটেসেটে থাকার জন্য। উপরন্তু রোসেটার মা একজন পাড় মাতাল।

রোসেটা ভালোবাসে মাকে। মায়ের স্বস্তির জন্য সুরা পানের অর্থ যোগান দেয়াটাও রোসেটার জন্য একটা বাড়তি চাপ। সংসারে খাওয়া থাকার সব খরচা যোগানের একমাত্র উপার্জনকারী রোসেটা। ফলে রোসেটা বাঁচার স্বার্থেই এবং অন্যদের বাঁচিয়ে রাখতে একটা ফ্যাক্টরিতে ট্রায়াল ভিত্তিতে চাকরি নেয়।

ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় রোসেটাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু নিরূপায় ব্যথিত রোসেটা কিছুতেই ফ্যাক্টরির চাকরি ছেড়ে যাবে না। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে রোসেটাকে ফ্যাক্টরি থেকে বের করে দেয়। ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়ানো রোসেটার মনে হয় সে রণাঙ্গনের সৈনিক যার সামনে হয় মৃত্যু নচেৎ সংগ্রামে জয়লাভ। চাকরিটা রোসেটাক পেতেই হবে নইলে সপরিবারে মরতে হবে। ১৮ বছর বয়সী কচি লতার মতো বেড়ে ওঠা রোসেটার জীবন এবং সংগ্রামের টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চলচ্চিত্র রোসেটা।

রোসেটার মতোই আরেক তরুণী মারভা। মারভার পিতার আজীবনের স্বপ্ন সুরকার এবং গীতিকার সত্তা নিয়ে বেলজিয়ামে প্রতিষ্ঠা লাভ করা। মারভার পিতা জিন কোনোভাবেই সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়ণ করার পথ খুঁজে পায় না। পাশাপাশি মারভার পিতার আরেকটি স্বপ্ন কন্যা মারভা এক না এক

সময় গায়কি সত্তা নিয়ে বেলজিয়ামে প্রতিষ্ঠা পাবে। স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার পথটা ঠিক কি রকম, শেষ পর্যন্ত কিভাবে কন্যা মারভা এবং পিতা জিন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আহরণ করলেন সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে ২০০০ সালে দমেনিক দেরুদা নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘এভরিবডি ফেমাস’। এই বেলজিয়ামের চলচ্চিত্রটি ২০০০ সালে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়।

মনোনীত না বরং নির্ধারিত ব্যক্তিকে ভাড়ায় খুন করতে অভ্যস্ত এক সিরিয়াল কিলারের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের কাহিনীচিত্র ‘দি আলজাইমার কেস (আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত দি মেমোরি অব এ কিলার)’ নির্মাণ করেন। পরিচালক এরিখ ভ্যাল লয়েস।

চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায় পুলিশের গোয়েন্দা দলে ভিনকি এবং ভার্সআপট্ চৌকস গোয়েন্দা অফিসার। দুজন দেহপসারিণী হত্যার ক্লু উদ্ঘাটন করতে যেয়ে অফিসার দুজন নিশ্চিত হয় খুনের জন্য দায়ী ঠাণ্ডা মাথার ভাড়াটে খুনি অ্যাঞ্জেলা লেড্ডা।

খুনি অ্যাঞ্জেলার লেড্ডার দীর্ঘ দিনের রোগ অ্যালজাইমার তথা স্মৃতিভ্রংশ। একটু আগের ঘটনাও সময় সময় মনে থাকে না। চলচ্চিত্রের নাটকীয় দ্বন্দ্ব শুরু হয় যখন খুনি অ্যাঞ্জেলো লেড্ডা ১২ বছর বয়সী কন্যাসম একটি মেয়েকে হত্যার অর্ডার নিয়ে মেয়েটিকে হত্যা না করায় নিজেই অপর ভাড়াটে খুনির কিলিং মিশন টার্গেটে পড়ে যায়।

একদিকে অ্যালজাইমার রোগ তথা স্মৃতিভ্রংশের যন্ত্রণা অপরদিকে ১২ বছর বয়সী মেয়েটির ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে চলচ্চিত্র অ্যালজাইমার কেস। ২০০৭ সালে এক বেলজিয়াম যুবক যার নাম বেন, যার একমাত্র ভালো লাগা কম্পিউটার গেম, সেই বেনের মনে।

কম্পিউটার জগৎ এবং জীবনধারণের বাস্তব জগতের মধ্যকার দূরত্ব, মোহ এবং মোহভঙ্গ এবং নিত্যনতুন আবিষ্কারের কৌতূহলকে ঘিরে পরিচালক নিক বলতাজার নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘বেনএক্স’। এই চলচ্চিত্রটি যেমন ইউরোপ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয় ঠিক তেমনি মনটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।

লাভ-লোকসানের কথা বিবেচনায় রেখে বেলজিয়াম এখন চলচ্চিত্র মাধ্যমের গুরুত্ব ও শক্তিকে মূল্য দিচ্ছে। দুদুটি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে মেরুদণ্ড সোজা করে সহজভাবে উঠে দাঁড়ানো একটু কঠিন। তার উপর রয়েছে হলিউডের একচেটিয়া আধিপত্য।

চলার পথে সবসময় একলা চলা যায় না। সাথে বেলজিয়াম সঙ্গী করে নিয়েছে ডাচ ফিল্ম কোম্পানিদের। যৌথ নির্মাণে তরতর করে এগিয়ে চলছে বেলজিয়ামের চলচ্চিত্রাঙ্গন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যদের জানাতে এবং নিজেরা জানতে বেলজিয়ামে প্রতিবছর আয়োজিত হচ্ছে চলচ্চিত্র উৎসব।

 

 

ইউরোপের চলচ্চিত্রের সূচি
বাতাসে গোলাপের ঘ্রাণ : চলচ্চিত্রাঙ্গন বেলজিয়াম

 

এর মধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চলচ্চিত্র উৎসব। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চলচ্চিত্র উৎসব ফ্লেন্ডারস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল জেন্ট। বেলজা নামের একটি প্রাচীন গোত্রের নামানুসারে যে দেশের নাম বেলজিয়াম সেই বেলজিয়াম দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে সামনে রেখে বেলজিয়ামবাসীর বলার সময় এসেছে, বিশ্ববাসী চেয়ে দেখো, আমরা ইউরোপের শুধু রণক্ষেত্র নই ককপিটও বটে; বাতাসে শুধু বারুদের গন্ধ না গোলাপের ঘ্রাণও ভাসে । আমরা দেখি আমরা দেখাই ।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment