আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ পাতার আড়ালে রসালো লিচু : চলচ্চিত্রাঙ্গন চেক রিপাবরিকান ।
পাতার আড়ালে রসালো লিচু : চলচ্চিত্রাঙ্গন চেক রিপাবরিকান

পাতার আড়ালে রসালো লিচু : চলচ্চিত্রাঙ্গন চেক রিপাবলিকান
মানুষ স্বভাবতই আরামপ্রিয়। ব্যারামের সম্ভাবনা না থাকলে দুটি-চারটি পয়সা যদি বেশি ব্যয়ও হয় তবু মানুষ আরামকে দুহাতে স্বাগত জানায়। যারা সেলুনে বসে চুল ছাঁটাই করায় কিংবা দাড়ি-গোঁফ শেফ করায় তারা অপেক্ষায় বসে থাকেন কখন সেলুনম্যান মাথা বা ঘাড়ে ম্যাসেজ দেবেন।
সেলুনম্যান দিলে ভালো না দিলে পনেরো-বিশ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করে আরামে ম্যাসেজ উপভোগ করেন। এটা উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত প্রত্যেকের জীবনে একটা মামুলি ঘটনা। কিন্তু যেটি মামুলি ঘটনা না সেটি হলো খনিজ ঝরনার পাশে শুয়ে থাকবে মানুষটি আর অপজিট জেন্ডারের ম্যাসেজম্যান পরম মমতায় মাথা-ঘাড়, হাত-হাঁটু-পা সায়েন্টিকভাবে মোলায়েম ম্যাসেজের মাধ্যমে মানুষটিকে সুখসাগরে ভাসিয়ে নেবে।
এই যে ম্যাসেজের পদ্ধতি সেটির ধরন এবং রকম বিভিন্ন রকম হলেও স্পা ম্যাসেজের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আকর্ষণীয় স্থান ইউরোপের দেশ চেক। চেকবাসী যেখানে একটি কায়িক শ্রমকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে।
সারা পৃথিবীর পর্যটকদের আকর্ষণ করাতে পেরেছে স্বভাবতই চেক প্রজাতন্ত্রের চলচ্চিত্রও হবে নান্দনিক এবং আকর্ষণীয়, সেটাই স্বাভাবিক। স্লামডগ মিলেয়নিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ব্রিটিশ চলচ্চিত্রকার ড্যানি বয়েল দেখিয়েছেন বস্তির ছেলে জামালের কোটিপতি হয়ে ওঠা।
অপরদিকে চেক পরিচালক জিরি মেনজেল তার চলচ্চিত্র ‘আই সার্ভ দি কিং অব ইল্যান্ড’ দেখিয়েছেন, কোটি কোটিপতি হয়ে বোঝার তলে চাপা পড়ে সৌভাগ্যের পরিবর্তে দুর্ভাগ্যের যাঁতাকলে ডিটোই নামের এক ব্যক্তির পিষ্টে যাওয়া। চেকবাসী যেন বোঝে রাতারাতি বড় হতে নেই, বেশি বড় হতে নেই।
অস্ট্রিয়ান বিশাল সাম্রাজ্যের অধীনেই তো ছিল আজকের চেক প্রজাতন্ত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে চেক প্রতিবেশী দেশ স্লোভাকিয়াকে সাথে নিয়ে চেকোস্লাভাকিয়া। ১৯৯৩ সালে এসে ভাঙন। একদিকে স্লোভাকিয়া অপরদিকে চেক প্রজাতন্ত্র। ভাঙা-গড়ার এই খেলায় চেক প্রজাতন্ত্র ভালোভাবেই জানে কোথায় থামতে হয়, কতটা সময় ধরে থামতে হয় এবং কিভাবে চলতে হয়।
জানে বলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুরো ইউরোপ যখন তছনছ হওয়ার দশা ঠিক তখন চেকোস্লোভাকিয়া বোমা হামলা তথা যুদ্ধের বিশাল ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের এড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রের যে যাত্রা সে যাত্রা ধীর কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে অটল, স্বকীয় কিন্তু অন্যদের দিতে ও নিতে উদার, উল্কার মতো ক্ষণে ক্ষণে চলচ্চিত্রকাশে আলোর রোশনাই কিন্তু দ্রুততারার মতো সদাই দীপ্তমান।
দীপ্তমান চেক চলচ্চিত্রের যাত্রা সেই ১৮৯৬ সাল থেকে। মোমের আলো থেকে যেমন অপর একটি মোম প্রজ্বলিত হয় ঠিক তেমনি ফ্রান্সের লুমিয়ের ভাইদ্বয় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চেক সিনোমাটোগ্রাফার জন ক্রিজেনেক্সি’র হাত ধরে চেক রাজধানী প্রাগে চেক ফিল্মের সফল প্রদর্শনী হয়।
নতুন কিছুর আবিষ্কারের কারণে চেক জনগণ যারপরনাই খুশি। খুশি, আনন্দ, উৎসবকে নিয়মিত করার লক্ষ্যে প্রাগে খোলা হয় মুভি থিয়েটার। চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে নির্মিত চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ বিষয়গুলো ছিল মেলোড্রামা ধরনের।
মেলোড্রামা দিয়ে তো আর যুদ্ধ চলে না। যুদ্ধ শেষে বিষয় হিসেবে চেক চলচ্চিত্রে স্বদেশ, মমতা বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে থাকে। ফলে চেক সমাজে নতুন জাগরণ দেখা দেয়। এ সময় নতুন নতুন ফিল্ম কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত তখনই প্রথম পেশাদার স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ সময় যে নির্মাতারা চেক চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মার্টিন ফ্রিক, কার্ল লামেক ও গুস্তাভ মাকহাটি। গুস্তাভ মাকহাটি তার চলচ্চিত্র ‘এক্সটাজি’তে দেখালেন এক অসম সম্পর্কের নাটকীয় দ্বন্দ্ব। লোকে কথায় বলে, ঠাণ্ডা চা আর বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা দুটিই গ্রহণ করা কষ্টকর। অথচ চলচ্চিত্রে হয়েছেও তাই। ইভা নামের এক তরুণীর বিয়ে হয়েছে এক বৃদ্ধ লোকের সাথে।
মনে বাসনা থাকলেও দেহ বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিক সহজাত প্রবৃত্তিতে কম সাড়া দেয়। ফলে লোকটি যেমন ইভার আবেদনে সাড়াও দেয় না তেমনি ভালোবাসা স্নেহ-আদর উজাড় করে দিতেও ব্যর্থ হয়। ফলে হতাশ বিষণ্ণ ভেঙে পড়া ইভা আর পিতার ঘরে ফিরে আসে।
মানুষ অবলম্বন ছাড়া বাঁচতে পারে না। লাউ গাছের লতা বেড়ে ওঠার জন্য হাতের কাছে যেমন কঞ্চির বেড়া পায় অনেকটা তেমনি এক সুদর্শন যুবকের আবির্ভাব ঘটে ইভার জীবনে। যুবককে কেন্দ্র করে যখন ইভা নতুন করে সংসার গোছাতে যাবে ঠিক তখন প্রাক্তন বৃদ্ধ স্বামী ফিরে আসে।
ঠিক সেই মুহুর্তে দ্বিধান্বিতা ইভা। একদিকে অতীতের জঞ্জাল, অপরদিকে সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি। ইভার মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের মধ্যে শেষ হয় চলচ্চিত্র এক্সটাজি। এসবের মধ্যেই চেকোস্লোভাকিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বাংলাদেশে যেমন এফডিসি তেমনি প্রাগে বারান্দাভ স্টুডিও। এই বারান্দায় স্টুডিও যেমন একাধারে চেক প্রজাতন্ত্রের গরিমা ঠিক তেমনি স ইউরোপের কাছে আকর্ষণীয় এবং অনুকরণীয় অত্যাধুনিক বিশাল স্টুডিও।
স্টুডিও বিশাল এবং আকর্ষণীয় হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় অ্যাডলফ হিটলার এই বারান্দাভ স্টুডিও থেকে নিজের প্রচার এবং প্রসারের জন্য সবটুকু নির্যাস উজাড় করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে চেক প্রজাতন্ত্রে চলচ্চিত্র শিল্পের ব্যক্তিমালিকানায় প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটে। গোটা চলচ্চিত্র শিল্প জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় পারফর্মিং আর্ট একাডেমী ফিল্ম স্কুল। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনের সাথে ভাব আদান-প্রদানের স্বার্থে ১৯৪৬ সালে মারিয়ানাস্কি লাজনি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়।
১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চেকোস্লোভাক রিপাবলিকের চলচ্চিত্র শিল্পে আরেকটি আঘাত আসে। এ সময় কমিউনিস্ট সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের উপর প্রভাব বিস্তার করে। সে সময় চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে প্রপাগান্ডার হাতিয়ার। চালু হয় সেন্সরশিপ। এ সময় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নির্মিত হয় রূপকথাভিত্তিক চলচ্চিত্র। যেমন বরিভস জিম্যান নির্মাণ করলেন ‘দি প্রাউড প্রিন্সেস’ চলচ্চিত্র। এক রাজকুমার কিভাবে এক কন্যার মন জয় করলো সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে দি প্রাউড প্রিন্সেস। দি প্রাউড প্রিন্সেস চলচ্চিত্রটি চেক জনপ্রিয়তা যেমন পায় তেমনি ব্যবসা সফল হয়।
১৯৬০-এর দশকে চেক চলচ্চিত্রের আকর্ষণীয় অ্যানিমেশন ছবি এবং সেলুলয়েডে তোলা চিত্রের মিলিত ফিউশন ছবি দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন নির্মাতা কার্ল জিম্যানের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘জার্নি টু ‘দ্য বিগিনিং অব টাইম’। চলচ্চিত্রটি অনেকটা জনি ডেপ অভিনীত আমেরিকান চলচ্চিত্র চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরির মতো। ক্যান্ডি চকোলেটের লটারিতে জিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পাঁচটি শিশু চকোলেট ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ করে যেমন ভিন্ন জগতের দৃশ্য দেখতে শুরু করে ঠিক তেমনি জার্নি টু দ্য বিগিনিং অব টাইম চলচ্চিত্রের চারটি কিশোর রিভার অব টাইম নামের নদীতে ভ্রমণ করা শুরু করে।
নৌকায় করে নদীতে চড়তে চড়তে হঠাৎ তারা স্রোতে ভেসে একটা গুহার মধ্যে প্রবেশ করে। গুহার যে মুখ দিয়ে তারা প্রবেশ করে তার উল্ব মুখে স্রোতের টানে পড়ার পর এক ভিন্ন জগতে প্রবশ করে। অপরপ্রান্তে নৌকা যত চলতে থাকে ততই তারা সঙ্গ দুনিয়া ছেড়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রবেশ করতে থাকে।
ব্যাপারটা অনেকটা গাড়ি সভ্যতা থেকে চাকা সভ্যতা। চাকা সভ্যতা হয়ে আগুন আবিষ্কারের সভ্যতা। আগুন সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পাথর নির্মিত অস্ত্রের সভ্যতা। চারটি শিশুর চোখ দিয়ে প্রাগৈতিহাসিক সময়কে দেখা এবং অতীত দেখে বর্তমানকে রাঙিয়ে সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয় কার্ল জিম্যানের চলচ্চিত্র জার্নি টু দ্য বিগিনিং অব টাইম।
টাইমকে মাথায় রেখে থিয়েটার, নৃত্য এবং সঙ্গীতের অপূর্ব কোলাজ নিয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে এক্সপো ‘৫৮ অ্যাওয়ার্ড ছিনিয়ে আনেন নির্মাতা আলফ্রেড রেডক তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দি ম্যাজিক লাম্বান চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
নির্মাণ বিনির্মাণের মধ্য দিয়েই পরিবর্তন সাধিত হয় সেটা বোঝা যায় ১৯৬০-এর দশকে। একদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কড়াকড়ি লোপ পায়, অপরদিকে ফ্রান্সের নবতরঙ্গ তথা নিউওয়েভের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সমগ্র চেক জুড়ে। জোর করে যেমন কারো অধিকার খর্ব করা চলে না তেমনি জোর করে অকর্মাকে স্বীকৃতি দেয়া চলে না। এ কথাও যেমন সত্যি তেমনি কিছু মীমাংসা যেন মীমাংসিত হওয়ার নয়। যেমন একটি গানের প্রকৃত দাবিদার কে হবে এবং প্রাপ্যই বা কে পাবে। গানটি কার?
যে গানটি লিখলেন সেই গীতিকারের, না কি যিনি কথার উপর সুর বসালেন সেই সুরকারের, না কি যিনি গানটি গাইলেন সেই গায়ক অথবা গায়িকার। এই মীমাংসার সমাধান গীতিকারের হোক কিংবা না হোক ফ্রান্সের পাঁচজন গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতার ১৯৫০-এর উপস্থিতিতে একটা নিশ্চিত সিদ্ধান্ত ঘটে যায় চলচ্চিত্রজগৎ এ । সেই পাঁচজন হলেন জাঁ-লুক গদার, ক্লদ শ্যারল, এরিক রোমার, ফ্রাঁসোয়া ক্রফো এবং জাক রিভেত।
হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মতো এই পাঁচ নির্মাতা একটা সিদ্ধান্তে আসেন আর তা হলো নির্মিত চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত পরিচালকের। স্ক্রিপ্ট রাইটার, সিনেমাটোগ্রাফার, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সব কলাকুশলী নিয়েই স্ক্রিপ্ট রাইটিং হয়ে পোস্ট প্রডাকশন সম্পন্নের মধ্য দিয়ে প্রদর্শন উপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় । সবার অবদানকে স্বীকার করে নিয়েই শেষ পর্যন্ত শেষ ভালো-মন্দের দাবিদার হবেন পরিচালক।
পাঁচজনের কাজ এবং চিন্তার সাথে সহমত প্রকাশ করে ফ্রান্সের পত্র-পত্রিকার জোরালো সমর্থনে সময় রূপ সমুদ্রে যে নতুন ঢেউ উতলে উঠলো সেটিই নবতরঙ্গ বা নিউওয়েভ । ফ্রান্সের চলচ্চিত্রে যে নিউওয়েভ উঠলো পঞ্চাশের দশকে সে ঢেউ যে কোনো দেশে যে কোনো সময় উঠতে পারে সঠিক, সক্ষম, বিচক্ষণ পরিচালকদের হাত ধরে।
যে পরিচালকদের হাত ধরে চেক চলচ্চিত্রে নিউওয়েও ধারার শুরু হয়। তিনি হলেন পরিচালক ফোরম্যান। ১৯৬৩ সালে তিনি নির্মাণ করলেন। চলচ্চিত্র ‘ব্লাক পিটার’। পিটার ব্লাক হোক আর ওয়াইট মানুষ তো দুরকমের। এক রকমের মানুষ কথা শুনবে কিন্তু কাজ করবে না। আরেক রকমের মানুষ কাজ করবে কিন্তু কথা শুনবে না। এই দ্বিতীয় প্রকারের মানুষ ১৭ বছর বয়সী পিটার।
ব্যস্ত কোলাহলমুখর প্রাগ শহরের একটি শপিংমলে সিকিউরিটির কাজ করে পিটার। তার বস তাকে সব সময় ইনস্ট্রাকশন দেয়। অবাক মানুষের মতোই বসেরও বলার ধরন খানিকটা এ রকম, পিটার তুমি তোমার মতো পাহারা দাও কিন্তু আমার মতো করে। তুমি যতটুকু সময় পাও ততটুকু সময় কাজ করো যেমন আমি আঠারো ঘণ্টা কাজ করি। তুমি তোমার পছন্দের রঙের শার্ট পরো যেমন আমার কালো রঙের মতো।
কোন কথার কি মানে, কি করণীয় পিটার বুঝতে না পেরে যা করে সেটা পিটার পিটারের মতোই করে। ফলে সেটি বসের নির্দেশের বিপক্ষে যায়। ফলে শপিংমলের ড্যান্স হল। পাহারার কাজে পিটার ব্যর্থ হয়। বাড়ি ফিরে পিটার যে বাবার কাছে সান্ত্বনা পাবে তা দূর অস্ত। বরং পিটারের বাবা পিটারকে বোঝায় পিটার কাজেও বোঝার ব্যাপারে কত বড় আকারের অপদার্থ।
পিটারের হীনতাবোধ এবং পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে পরিচালক ফোরম্যান যেন বোঝাতে চেয়েছেন, অন্যকে পরিচালনা করার আগে নিজে পরিচালিত হতে শেখাটা জরুরি। গরু-ছাগলের সামনে এক আঁটি গাজর ধরলে গরু-ছাগল হাঁটা শুরু করবে কিন্তু মানুষকে হাঁটাতে হলে আগে মানুষটিকে বোঝানো দরকার তার করণীয় কাজটা আসলে কি?
করণীয়টা কি জানলে যে কাজটা করা যায় সেটার প্রমাণ মেলে ব্লাক পিটারের পরিচালক ফোরম্যানের সহকারীরা যখন নিজেরাই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। নিউওয়েভ ধারায় ফোরম্যানের সহকারী ইভান পেসার নির্মাণ করেন ১৯৬৬ সালে ‘ইন্টিমেট লাইটিং’। ইন্টিমেট লাইটিং চলচ্চিত্রটিতে পরিচালক ইভান পেসার দেখিয়েছেন দুজন ব্যর্থ সঙ্গীতশিল্পীর নাটকীয় ব্যর্থতার কাহিনী। যারা সঙ্গীত জীবনে ব্যর্থ কিন্তু তাদের ব্যর্থতার পরিক্রমা মানুষ তথা দর্শকদের কাছে পরম আনন্দের।
পরম আনন্দের ঘটনা ঘটে এ সময় যে কারণে সেটি হলো এ সময় একাডেমি অব পারফর্মিং আর্টস (এফএইউএম) থেকে বের হওয়া তরুণ চলচ্চিত্র মাজুয়েটরা নিউওয়েক ধারার মূল চেতনাকে সব দর্শকের দৃষ্টির সম্মুখে আনতে সক্ষম হয় তাদের নির্মিত চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এসব চলচ্চিত্রকারের মধ্যে অন্যতম ভেরা ক্রিস্টি পোতা, জ্যানেমি এবং জিি মেলে।
জিবি মেনজেল যে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে সবার দৃষ্টি কাড়লেন সেটি হলো ‘বেনিয়ামিন মুজি এস ক্লিকউ। জীবনের উত্থানের যে কোনো পর্যায় নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি, নিজের পথের পথ প্রদর্শকদের যে ভুলতে নেই সে ভাবনাকে উপজীব্য করে তার নির্মিত তথ্যচিত্র বেনিয়ামিন মুঞ্জি এস কিছু কউ।
চেক চলচ্চিত্রের ৮০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চেক চলচ্চিত্রে আত্মনিবেদিত পরিচালক, লেখক, অভিনেতা, অভিনেত্রী তথা সমস্ত কলাকুশলীর সামগ্রিক অবদানকে সংক্ষেপে তুলে ধরেন তার নির্মিত তথ্যচিত্রে। বিষয়ে সময়টা ১৯০৭ সাল থেকে এসে ১৯৭৮ সালে এসে থেমেছে।
ফ্রান্সের লুমিয়ের ভাইদের ভূমিকা দিয়ে শুরু করে চেক চলচ্চিত্রকারদের স্বতন্ত্র ইতিহাস, চেক চলচ্চিত্রের নির্মাণ স্টাইল, চেক চলচ্চিত্রের গুণগত বৈশিষ্ট্য, বিশ্ব চলচ্চিত্রাঙ্গনে চেক চলচ্চিত্রের অবদান প্রভৃতির নির্যাস নিয়ে নির্মিত অসামান্য কষ্ট ধৈর্য এবং দায়িত্ববোধের মিলিত প্রয়াস জিরি মেনজেলের বেনিয়ামিন মুজি এস ক্লি কউ
জিরি মেনজেল যেমন তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অগ্রজ নির্মাতাদেরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, অপরদিকে যুদ্ধ যে মানুষের মানবিকতাকে ধ্বংস করে, শান্তির বিপরীতে যুদ্ধ যে শুধু ঘৃণাই ছড়ায়, যুদ্ধ যে সভ্য জগতের উপর বর্ধিত অভিশাপ সেই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন জ্যা নির্মিক তার নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ডায়মন্ডস অব দ্য নাইট’ চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে।

“ডায়মন্ডস অব দ্য নাইট’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে দুটি ইহুদি বালক যাদেরকে অ্যাডলফ হিটলারের বন্দীশিবির তথা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে অপর একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই এক ক্যাম্প থেকে অপর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বালক দুটি গার্ডদের চোখ এড়িয়ে সাময়িক পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ইহুদি বালক দুটি পালিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে বুদ্ধ হোম গার্ডদের হাতে ধরা পড়ে। যে বৃদ্ধরা চাইলেই অবলা শিশু দুটিকে বাঁচিয়ে দিতে পারতো, পালানোর পথ করে দিতে পারতো সেসব না করে গার্ডরা শিশু দুটিকে ধরে পৌঁছে দেয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। নৃশংস পরিণতির মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শিশু দুটির জীবন।
যুদ্ধের লেলিহান শিখা কিভাবে গ্রাস করে মনুষ্যত্বকে এটা যেমন চলচ্চিত্রের উপজীব্য ঠিক তেমনি মানবজীবনে সম্মান এবং মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখতে মানুষকে যে বাঁচতে হয় মানবিকতা নিয়ে, মনুষ্যত্ব নিয়ে সেই আহ্বানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চলচ্চিত্র ডায়মন্ডস অব দ্য নাইট।
নাইট হোক কিংবা ডে হোক সম্পদ থাকলেই যে সম্পদ নিয়ে মাথা ব্যথা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সম্পদশালী মানুষের সঙ্গীরা যে সম্পদশালী মানুষটিকে ঘিরে রাখে সেটি কিসের জন্য? সম্পদের লোভে না কি সম্পদশালী মানুষটির প্রতি ব্যাকুলতায়— সেই প্রশ্নের উত্তরে চেক পরিচালক ইলমার ক্লোস এবং জ্যা কাদাবদ্বয়ে নির্মিত অস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘দি শপ অন মেইন স্ট্রিট’। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্র টনো ব্রিকো পেশায় কাঠমিস্ত্রী। টনো ত্রিকোর কাজের পরিক্রমায় শেষ পর্যন্ত কাজ জোটে এক ইহুদি রমণীর ঘরে।
ইহুদি রমণীর ভয়, টনো ব্ৰিকো কাজ যা কিছু ভালো করছে তা তার মন জয় করে সঞ্চিত সম্পদ নিয়ে পালানোর জন্য। টনো ত্রিকো যতই বিশ্বস্ততা দিয়ে ইহুদি রমণীকে আশ্বস্ত করতে চায় যে সে লোভী না, অপরের অর্থ-সম্পদকে নিজের সম্পদ সে ভাবে না, সে শুধুই সামন্য এক কর্মী যে শ্রম দিয়ে প্রাপ্য পেলেই সন্তুষ্ট, তবু কে কাকে কিভাবে বোঝায়। মানুষের মনের সংশয় ঘোচান কি এতই সোজা।
বনের বাঘ তো তত মানুষ খায় না যত মনের বাঘ মানুষকে খায়। কিন্তু সততার তো মূল্য আছে। ইহুদি রমণীর নিশ্চিত এক বিপদের মুহূর্তে টানো ত্রিকো যেদিন ইহুদি রমণীকে রক্ষা করে সেদিন ইহুদি রমণী নিশ্চিত হয় টনো ব্রিকো সম্পদের লোভী না বরং করণীয় কাজ সম্পাদনা এবং মনিবকে রক্ষা করতে যারপরনাই ব্যাকুল। ব্যাকুলতার জয়গাথার মধ্য দিয়ে শেষ হয় চলচ্চিত্র দি সপ অন মেইন স্ট্রিট।
মেইন স্ট্রিটে একবার উঠতে পারলে যে আর অলিগলির বাঁকা পথে পথ ভুলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই সেটা বোঝা যায় চেক চলচ্চিত্রকারদের একটার পর একটা অস্কারে বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম বিভাগে অস্কার জয়লাভের মধ্য দিয়ে। চলচ্চিত্রকার জিরি মেনজেল তার নির্মিত চলচ্চিত্র “ক্লোজলি ওয়াচড ট্ৰেইনস’-এর মাধ্যমে অস্কার পুরস্কার পেলেন।
চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়। জার্মানির পরাজয় যখন চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে আসছে সেই সময়ে এক রেলগার্ডের কর্মী মিলস হারমা নামের যুবকের ঘটনার কাহিনীচিত্র। স্টেশন মাস্টারের দয়ালু স্ত্রী গার্ড মিলস হারমার প্রতি দয়ালু। স্টেশন মাস্টারের স্ত্রীর ঘরে কাজ করতে আসা একটি মেয়েকে অবলম্বন করে গাড মিলস হারমার একাকীত্ব কাটে। রেল কন্ডাক্টর মাসা নামের এক বন্ধু এসে মিলস হারমার সাথে সময় পার করে।
দুই বন্ধুর মাঝে ছাই চাপা আগুনের মতো বন্ধুবেশী শত্রু নাৎসি গোয়েন্দা জেডনিক ঢুকে পড়ে। চেক যুবক মিলস হারমা একটা সময় শত্রু আগত ট্রেন বোম্বিং করে উড়িয়ে দেয়। শত্রু বিনাশ করতে যেয়ে স্বদেশ প্রেমে মিলস হারমা নিজেকে উৎসর্গ করে।
দেশপ্রেমের চলচ্চিত্র ক্লোজলি ওয়াচড ট্রেইনস। চলচ্চিত্রকার ফ্রান্সিক ড্রাসিল পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র ‘মারকেটা লাজারোভা’। মিকোলাস এবং তার ভাই এডাম তাদের অত্যাচারী বাবার হাত থেকে রক্ষা পেতে ভ্রমণকারী পর্যটকদের কাছ থেকে কিভাবে সম্পদ চুরি করতো সেই প্রেক্ষাপট নিয়েই চলচ্চিত্রটি।
১৯৬৮ সালের আগস্টে ওয়ার্সো চুক্তি চেক চলচ্চিত্রের গতির ছন্দে খানিকটা পতন ঘটালেও সেটা সাময়িক। কমিউনিস্ট মতাদর্শীদের বিভিন্ন রকম বাধা নিষেধের কারণে চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যাত্রা বাধাগ্রস্ত হলেও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
বড় কথা বড় মুখে বলা না গেলে ছোট মুখে ছোট কথা না বলে উপায় কি। ফলে চেক চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এ সময় শিশুতোষ চলচ্চিত্রের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। যেমন চলচ্চিত্রকার কেরেল নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘জাম্পিং ওভার প্যাডেল এগাইন’।
অমিতাভ বচ্চন ব্যক্তিজীবনে পোলিও রোগ নির্মূলে ব্যাপক সচেতনতা দেখিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন কি না জানা নেই। সঞ্জয় লীলা বনশালীর চলচ্চিত্র ‘ব্লাক’-এ এক অন্ধ বধির মেয়ে যেখানে রানী মুখার্জি অভিনয় করেছে, তাকে সুস্থ করে তুলেছে।
এসবে পুরস্কার দেয়া নিয়ে সোরগোল শুরু না হলেও ‘পা’ ছবিতে কেন অমিতাভ বচ্চন প্রতিবন্ধীদের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে ঠাট্টা করেছেন সেটি নিয়ে ইতোমধ্যেই এক আদালতে মামলা করেছেন আইনজীবী শ্রুতি সিং। ‘পা’ চলচ্চিত্র রিলিজ হলে বোঝা যাবে আইনজীবী যা বলতে বোঝাতে চেয়েছেন তা আদৌ সত্য কিনা। কিন্তু জাম্পিং ওভার প্যাডেল এগাইন চলচ্চিত্রটি কেন্দ্রীয় চরিত্রের শিশুটি পোলিও আক্রান্ত পঙ্গু।
তবু শিশুটির সখ ঘোড়ায় চড়ার । শিশুর ঘোড়ায় চড়ার খোরা রোগের ভাবনায় মা-বাবা উদ্বিগ্ন। শিশুটি শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের উদ্বিগ্নতা পরিহার করে চেষ্টা সাধনা দ্বারা ঘোড়ায় চড়তে সক্ষম হয়। পরিচালক কেরেল যেন বোঝাতে চেয়েছেন, হোয়েন ইউ ক্যাননট ওয়াক দ্যান ইউ রান (যখন তুমি হাঁটতে পারছো না তখন তুমি দৌড়াও)।
দৌড়ের উপর আছে বর্তমান চেক চলচ্চিত্রের যাত্রা। ১৯৯৬ সালে পিতা- পুত্রের টিম নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কোলইয়া’ বেস্ট ফরেন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রের কাহিনী খানিকটা মাজিদ মাজিদির ‘কালার অফ প্যারাডাইস’-এর পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব এবং একাত্ম হওয়ার মতো।
ফ্রান্টা লুকা নামের এক চেক বয়স্ক লোক কনসার্ট দল থেকে বাদ পড়ে করবখানার সমাধির গায়ে রং করে এবং আগত শোকান্ধিত মানুষদের মরমী গান শোনায়। ফ্রান্টা লুকা তার এক ডোম বন্ধুর পরামর্শ শুনে অধিক সম্পদ লাভের আশায় রাশিয়ান এক মেয়েকে বিয়ে করে।
বিয়ে করে সম্পদশালী হবে অথচ বিপদ হবে না তা তো হয় না। ফ্রান্টা লুকা তার আগের মৃত স্ত্রীর ঘরের ছেলে কোলাইয়াকে দাদীর কাছে রেখে নব স্ত্রীর সঙ্গী হয়ে পশ্চিম জার্মানি চলে যায়। দাদীর মৃত্যুর পর পুত্র কোলাইয়া যে পরম মমতাকে বুকে আগলে পিতা ফ্রান্টা লুকার কাছে পৌঁছায় সেই মরমীগাথা নিয়ে চলচ্চিত্র কোলাইয়া ।
কোলাইয়ার বাবার কাছে পৌঁছানোর মতো চেক চলচ্চিত্রকার পিটার জারকোভস্কি ২০০২ সালে তার নির্মিত ডকুমেন্টারি ফিল্ম নিয়ে অস্কারে মনোনীত হয়। চলচ্চিত্রটির নাম ‘ডিভাইডেড উই ফল’। ৯/১১-এর ঘটনার পর আমেরিকান জীবনে আরব, শিখ, মুসলিম তথা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসা হিংস্রতার এবং বিচারের নামে বিভিন্ন প্রহসনের বাস্তব দলিল চিত্রই ডিভাইডেড উই ফল। নির্যাতিতের পাশাপাশি আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী আইন প্রণেতা এবং বিভিন্ন পেশাজীবীর বক্তব্যের আলোকে তথ্যচিত্রটি নির্মিত।
ইউরোপিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত চলচ্চিত্র পরিচালক সাসো গাডিয়ানের নির্মিত ‘দ্য ইডিয়ট রিটার্নস’ পেন্টিস নামের এক লোক জীবনের একটা বড় সময় ধরে জেল খাটার পর আজ বাড়ি ফিরছে। জেলে যখন পেন্টিস গিয়েছিল তখন সে অপরিণত, আজ যখন ফিরছে তখন সে পরিণত।
পরিণত পেন্টিসকে দেখে বাড়ির লোকজন কেউই আজ তাকে চিনতে পারছে না। চোখের আড়াল হলে মানুষ যে মানুষের মনের আড়ালে চলে যায়, আপন বলতে পেন্টিসের কেউ নেই এই নিদারুণ সত্য আবিষ্কার এবং কেউ একজন অন্তত তাকে আপন ভেবে আপনার করে নেবে সেই আহ্বান নিয়ে চলচ্চিত্র দ্য ইডিয়ট রিটার্নস ।

রিটার্নের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্রের চলচ্চিত্র অঙ্গন। ডকুমেন্টরি ফিল্ম, অ্যানিমেটেড ফিল্ম, ফিচার ফিল্ম নির্মাণ, পরিবেশন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণের মধ্য দিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের জয়যাত্রা।
চেক চলচ্চিত্রকাররা ধীরে শুরু করে, নীরবে বেড়ে ওঠে আবার রোশনাইয়ের মতো জ্বলে উঠে স্বঅবস্থানে ফিরে যায়।চেক চলচ্চিত্রকাররা অনেকটা চলচ্চিত্রাঙ্গনের মালির মতো। বীজ বপন, আগাছা সরানো, জল ঢালা, অঙ্কুরের যত্ন নেয়া, লতাপাতা ছাড়িয়ে গাছ থেকে ফুল ফোঁটা পর্যন্তই তাদের কাজ।
পুষ্প শোভিত বাগানের সামনে থেকে কত পথিকই না পথ চলতে চলতে যায় বাগানের শোভা দেখে, তাতেই মালির শান্তি, আনন্দ ।চেক প্রজাতন্ত্রের চলচ্চিত্রাঙ্গনের অবস্থাও সেই বাগানের মতো আর বিশ্ববাসী সেই পথ চলতি পথিক যাদের চোখে আজ চেক চলচ্চিত্র এক পরম বিস্ময়, এক অজানাকে জানার উদাত্ত আহ্বান।
আরও দেখুনঃ