Site icon চলচ্চিত্র গুরুকুল [ Film Gurukul ] GOLN

অভিনেত্রী ববিতা । চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক

অভিনেত্রী ববিতা

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অসাধারণ সুন্দরী প্রতিভাবান অভিনেত্রী ববিতা। অভিনয়ের যোগ্যতায় তিনি বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে অভিনয় করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে, অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী বিখ্যাত বাঙ্গালী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সাথে। অভিনেত্রী ববিতার আরেকটি পরিচয় হল তিনি অভিনেত্রী সুচন্দা এবং চম্পার বোন। তিন বোনের মধ্যে ববিতা মেজ। অভিনেত্রী বড় বোন সুচন্দার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আগমন তার।

জন্ম ও কৈশোর

অভিনেত্রী ববিতা ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা জাহানারা বেগম ছিলেন একজন চিকিৎসক।ববিতার কৈশোর কেটেছে যশোরে। তার বাবা সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। সুচন্দার অভিনয়ের কারণে তারা ঢাকায় স্থায়ী হন। এ কারণেই ববিতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। তবে ব্যক্তিগত চেষ্টায় ববিতা শিক্ষিত হন, তিনি একাধিক ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করেন। বড়বোন সুচন্দা এবং ছোট বোন চম্পা ছাড়াও একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী তার আত্মীয়। এদের মধ্যে ভগ্নিপতি জহির রায়হান, ভাগ্নে ওমর সানী, ভাগ্নেবউ মৌসুমী এবং চাচাতো ভাই রিয়াজ উল্লেখযোগ্য। ববিতার পিতা নিজামুদ্দীন আইয়ুব সরকারী কর্মকর্তা এবং মাতা বি জে আরা পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।

অভিনয়ে আগমন

১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের সংসার চলচ্চিত্রে ‘সুবর্ণা’ নামে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। পরবর্তীতে জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ ছবিতে ববিতা নাম ধারণ করেন। পূর্ণ নায়িকা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৯ সালে রাজ্জাকের বিপরীতে ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির মাধ্যমে। ববিতা নাম ধারনের আগে তিনি কলম নামে একটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন বলে জানা যায়। জহির রায়হানের দেখানো পথে শুরুর দিকে চললেও পরবর্তীতে স্বীয় অভিনয়গুণের কারণে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের সারিতে নিজেকে নিয়ে আসতে সক্ষম হন ববিতা। জহির রায়হান পরিচালিত ‘টাকা আনা পাই’ তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

শুরুর দিকে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও পরবর্তীতে ববিতা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রবর্তন হলে তিনি টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। তার পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলো হল ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘নয়নমনি’ ও ‘বসুন্ধরা’। পরবর্তী কালে তিনি ‘রামের সুমতি’ ছবির জন্য আরেকটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি আরও তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’ ছবি প্রযোজনার জন্য এবং ‘হাছন রাজা’ ও ‘কে আপন কে পর’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।

অভিনয়ের ধরন

ববিতা প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তবে এক পর্যায়ে সিনেমার জগতে টিকে থাকার জন্য এবং বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য তিনি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়েন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাই ববিতা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্যতা লক্ষণীয় ছিল। অভিনয়, গ্ল্যামার, স্কিন পার্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি মা-ভাবির চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন।

গ্রামীণ, শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকী সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।তৎকালীন সময়ে তিনি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেন। নগর জীবনের আভিজাত্য তার অভিনয়ে ধরা পড়েছিল। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক সিনেমা মানেই ছিল ববিতা।

চিরসবুজ অভিনেতা জাফর ইকবালের সাথে ববিতার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে এ সম্পর্কের কোন সফল সমাপ্তি ঘটে নি। আশির দশকের শুরুতে ববিতা চট্টগ্রামের সন্তান চলচ্চিত্র পরিচালক ইফতেখারুল আলমকে বিয়ে করেন। তবে তাদের এ সংসার বেশিদিন টিকে নি। তাদের সন্তান অনিক। বর্তমানে অনিক কানাডায় থাকছেন। ববিতাও বছরের বেশিরভাগ সময় অনিকের সাথে কানাডায় অবস্থান করেন।

পুরস্কার এবং সন্মাননা

ববিতা পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন। সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্র “অনঙ্গ বউ” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারী অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।ভিনেত্রী ববিতা ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা জাহানারা বেগম ছিলেন একজন চিকিৎসক।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version